চাঁদ থেকে বেরোচ্ছে লাল সাদা আলোর অদ্ভুদ ঝলকানি এটা কি কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা, নাকি লুকিয়ে আছে কোনো রহস্য

Last Updated on October 25, 2025 by admin

রাতের আকাশে জ্বলজ্বলে চাঁদ আমাদের সবার প্রিয়। কিন্তু যদি হঠাৎ শুনি — চাঁদ থেকে অদ্ভুত আলো বের হচ্ছে, তাহলে কি সেটা শুধুই কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা, নাকি সত্যিই সেখানে কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে? সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে এমন এক ঘটনাই উঠে এসেছে, যাকে বলা হয় ট্রান্সিয়েন্ট লুনার ফেনোমেনা (TLP)। এই ঘটনায় দেখা যায় চাঁদের গায়ে অল্প সময়ের জন্য অদ্ভুত আলো বা আভা তৈরি হয়। এবার চলুন বিস্তারিত জানি, কীভাবে ও কেন ঘটে এই চাঁদের আলো রহস্য।

চাঁদ, ট্রান্সিয়েন্ট লুনার ফেনোমেনা, TLP, চাঁদের রহস্য, চাঁদের আলো, চাঁদ থেকে আলো, Moon Light Mystery, Moon Phenomenon, Astronomy, Space Science, চাঁদের খবর, বিজ্ঞান

ট্রান্সিয়েন্ট লুনার ফেনোমেনা (TLP) কী?

চাঁদের পৃষ্ঠে কখনো কখনো কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিটের জন্য লালচে, হলুদ বা সাদা আলো ঝলকাতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাকেই বলেন ট্রান্সিয়েন্ট লুনার ফেনোমেনা। এটি একেবারেই নতুন কিছু নয় — শত শত বছর ধরে মানুষ এই রহস্যময় আলোর সাক্ষী। 1125 সালের পুরনো রেকর্ড থেকে শুরু করে 1400 সালের বিভিন্ন চিত্রেও এই আলোর উল্লেখ রয়েছে। এমনকি বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম হার্শেল 1787 সালে চাঁদের অন্ধকার অংশে তিনটি লালচে আলোর ঝলক দেখেছিলেন।

অ্যাপোলো মিশনেও দেখা গিয়েছিল রহস্যময় আভা

শুধু প্রাচীন যুগই নয়, আধুনিক যুগেও এই ঘটনা ধরা পড়েছে। 1969 সালের অ্যাপোলো 11 মিশনের নভোচারীরাও চাঁদের দিগন্তে উজ্জ্বল এক আভা লক্ষ্য করেছিলেন। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় 3000টিরও বেশি TLP ঘটনার নথি পেয়েছেন, যা প্রমাণ করে এই রহস্য বাস্তব এবং পুনরাবৃত্তিমূলক।

চাঁদের আলো ঝলকানোর আসল কারণ

চাঁদের কিন্তু পৃথিবীর মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট পাথর বা উল্কা যখন প্রচণ্ড গতিতে চাঁদের বুকে আঘাত করে, তখন তীব্র তাপ ও আলোর সৃষ্টি হয়। এই আলোই আমাদের কাছে সেই অদ্ভুত “ঝলক” হিসেবে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বেশিরভাগ TLP ঘটনাই উল্কাপিণ্ডের আঘাতের ফলাফল।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির পর্যবেক্ষণ

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)-এর একটি বিশেষ প্রকল্প “NELIOTA” এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক টেলিস্কোপে চাঁদ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই প্রকল্পে বিজ্ঞানীরা শত শত উল্কাপাতের ঝলক ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। ফলে এই ঘটনাগুলি যে সত্যিই ঘটছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গ্যাস নির্গমনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না

চাঁদের মাটির নিচে অনেক জায়গায় ফাটল বা গর্ত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কখনো কখনো এই ফাটল দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়। যখন এই গ্যাস সূর্যের আলোতে আসে, তখন তা চকচকে আভা তৈরি করে — অনেকটা আগ্নেয়গিরির ধোঁয়ার মতো। গ্যাসের মধ্যে থাকে রেডন ও আরগন জাতীয় উপাদান, যা আলোকে প্রতিফলিত করে। এই আলোগুলো কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

চাঁদ কি তবে সম্পূর্ণ নিথর নয়?

আমরা অনেকেই ভাবি চাঁদ একেবারেই মৃত বা নিথর। কিন্তু যদি সত্যিই তার ভেতর থেকে গ্যাস নির্গমন ঘটে, তাহলে তা প্রমাণ করে যে চাঁদ এখনও আংশিকভাবে সক্রিয়। তার ভেতরে ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপ চলছে। তাই এই TLP ঘটনাগুলি চাঁদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গবেষণার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ দিক

বিজ্ঞানীরা এখন আধুনিক টেলিস্কোপ, সেন্সর এবং স্পেস অবজারভেটরি ব্যবহার করে এই ঘটনাগুলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কারণ ভবিষ্যতে মানব বসতি স্থাপন বা চাঁদে ঘাঁটি তৈরি করার আগে, এই ধরনের আলো বা বিকিরণ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা বোঝা খুব প্রয়োজন। এই গবেষণা চাঁদের ভূতত্ত্ব, তার নিরাপত্তা ও পরিবেশ সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য দিচ্ছে।

তাহলে কি এলিয়েনরাই আলো জ্বালাচ্ছে?

এখনও কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, অনেক TLP-র কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। কিছু আলো এতটাই তীব্র যে তার উৎস ব্যাখ্যা করা কঠিন। তাই কিছু মহাকাশপ্রেমী কল্পনা করছেন — হয়তো ভিনগ্রহীরা (এলিয়েন) চাঁদের পৃষ্ঠে ঘোরাঘুরি করছে, আর সেই আলো তাদের জাহাজ বা যন্ত্রের প্রতিফলন! যদিও এই ধারণা প্রমাণিত নয়, তবে রহস্যটিকে ঘিরে কৌতুহল এখনো অমলিন।

উপসংহার

চাঁদের বুকে ঝলসে ওঠা এই রহস্যময় আলো শুধু বিস্ময় নয়, বিজ্ঞান গবেষণার জন্য এক মূল্যবান সূত্রও বটে। কখনো উল্কাপিণ্ডের আঘাতে, কখনো গ্যাস নির্গমনে, আর কখনো অজানা কারণে — চাঁদ এখনো নিজের রহস্যময় সৌন্দর্য নিয়ে মুগ্ধ করে চলেছে মানবজাতিকে। হয়তো একদিন আমরা সত্যিই জানতে পারব, চাঁদের সেই “আলো” আসলে প্রকৃতির খেলা, নাকি ভিনগ্রহের কোনো গোপন বার্তা।

Leave a Comment