কৃষকদের জন্য সরকারের বড়ো ঘোষণা! ধান বিক্রির ৩ দিনের মধ্যেই কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা

Last Updated on October 22, 2025 by admin

পশ্চিমবঙ্গের কৃষক বন্ধুদের জন্য এ বছর এক বড়ো সুখবর নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। এতদিন ধরে ধান বিক্রির পর কৃষকদের অনেকদিন অপেক্ষা করতে হতো তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছানোর জন্য। এই বিলম্বের কারণে অনেক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, কারণ রবি মরসুমের চাষ শুরু করতে তাদের দ্রুত অর্থের প্রয়োজন হয়। এবার সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতে সরকার ঘোষণা করেছে — ধান বিক্রির মাত্র তিন দিনের মধ্যেই কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে। যদি মাঝখানে সরকারি ছুটি পড়ে যায়, তবে এক বা দুই দিনের সামান্য দেরি হতে পারে, তবে মূল লক্ষ্য হচ্ছে চাষীদের দ্রুত আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।

ধান ক্রয় শুরু নভেম্বরের গোড়া থেকেই

খাদ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আগামী নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় শুরু হবে। এইবার শুধু সিপিসি নয়, একাধিক সংস্থার মাধ্যমেও ধান ক্রয় করা হবে। এছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকদের সুবিধার জন্য মোবাইল ভ্যান ব্যবস্থাও চালু করা হচ্ছে, যাতে তারা সহজেই নিজের এলাকার কাছেই ধান বিক্রি করতে পারেন। এবার একজন কৃষক সর্বাধিক ৯০ কুইন্টাল পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারবেন। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ধানের নূন্যতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কুইন্টাল প্রতি ₹২৩৬৯, সঙ্গে অতিরিক্ত ₹২০ উৎসাহ ভাতা দেওয়া হবে।

কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ

কৃষকদের অভিযোগ ছিল, দেরিতে টাকা পাওয়ার ফলে তারা প্রায়ই ফড়েদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন। ফড়েরা তখন সুযোগ নিয়ে কম দামে ধান কিনে নেন, ফলে কৃষকেরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। সরকার এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে তিন দিনের মধ্যে পেমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে কৃষকরা সরাসরি সরকারের কাছেই ধান বিক্রি করেন এবং ফড়েদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়।

ভাতারের চাষী শেখ আব্দুল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে বিক্রয় ক্যাম্পের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকেরা সহজে ধান বিক্রি করতে পারেন।”

নজরদারি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা

খাদ্য দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে প্রতিটি ক্রয়কেন্দ্রের উপর কড়া নজরদারি চালানো হবে। পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক আয়েশা রাণি এ জানিয়েছেন, কৃষকেরা যেন কোনও অসুবিধা ছাড়াই ধান বিক্রি করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, জেলা পরিষদের খাদ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ গুফরানা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, ফড়েদের কার্যকলাপ বন্ধ করতে ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, ফড়েরা প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে কুপন নিয়ে কমিশনের বিনিময়ে তাদের একাউন্ট ব্যবহার করে ধান বিক্রি করে। এবার এই ধরনের দুর্নীতি ঠেকাতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা প্রত্যেক কৃষকের বিক্রয় রেকর্ডের উপর নজর রাখবে।

উপসংহার

এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা অনেকটাই নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্রুত পেমেন্ট ও অতিরিক্ত ভরতুকি কৃষকদের উৎসাহ দেবে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রেই ধান বিক্রি করতে। পাশাপাশি ফড়েদের প্রভাব কমবে, আর কৃষকরা তাদের ন্যায্য দামের টাকা সঠিক সময়ে পেয়ে যাবেন। এখন নজর রাখতে হবে, এই ঘোষণা বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এবং চাষীরা তিন দিনের মধ্যেই টাকা পান কিনা। সরকার যদি এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে কৃষকদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।

Leave a Comment