সংসারের সুখ-শান্তি বজায় রাখতে ভূত-চতুর্দশীতে কখনোই করবেন না এই মারাত্মক ভুলগুলি

Last Updated on October 20, 2025 by admin

ভূত চতুর্দশী হল দীপাবলির আগের দিন পালিত এক বিশেষ দিন, যা মূলত পূর্বপুরুষ ও আত্মাদের স্মরণে উৎসর্গিত। এই দিনে বিশ্বাস করা হয় যে, যমরাজ সমস্ত আত্মাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার অনুমতি দেন, তাই গৃহস্থরা তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মাকে শান্তি দিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করে। বাংলায় এই দিনে চোদ্দটি প্রদীপ বা চোদ্দটি আলোর প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে, যাকে বলা হয় “চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো”। অনেকে বাড়ির প্রতিটি কোণে ও ছাদে প্রদীপ রাখে, যাতে অশুভ আত্মা বা অন্ধকার দূরে থাকে। আবার কেউ কেউ চোদ্দ শাক রান্না করে খায়, যা শরীর ও মনকে বিশুদ্ধ রাখার প্রতীক বলে ধরা হয়। ভূত চতুর্দশী আসলে আলোর মাধ্যমে অন্ধকারকে তাড়ানোর ও পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার এক আধ্যাত্মিক বার্তা বহন করে।

ভূত চতুর্দশী,ভূত চতুর্দশী কেন পালন করা হয়, দীপাবলি, ভূত চতুর্দশী দিনে কোন কাজগুলি করা উচিত নয়, ভূত চতুর্দশীর দিনে আত্মারা পৃথিবীতে কখন আসে

চুল বা নখ কাটা একেবারে নিষেধ

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ভূত চতুর্দশীর দিন চুল বা নখ কাটা অশুভ বলে বিবেচিত হয়। এটি মৃত্যু, রোগ বা দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এদিন শরীরের কোনো অংশে ধারালো কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই শেভ করা, দাড়ি কাটা বা সৌন্দর্যচর্চার কাজও বর্জন করা উচিত।

এই দিনে অশুভ কাজ বা ঝগড়া থেকে বিরত থাকুন

ভূত চতুর্দশীর দিন কোনো ঝগড়া-বিবাদ, কটূকথা বা নেতিবাচক চিন্তা করা একেবারেই নিষেধ। পুরাণে বলা হয়েছে, এই দিনে রাগ বা ক্রোধ করলে সেই শক্তি অশুভ আত্মাদের আকৃষ্ট করে। তাই শান্তভাবে, ভক্তিভরে দিনটি কাটানো উচিত। পারিবারিক অশান্তি, বিশেষ করে বাচ্চা বা বয়স্কদের সঙ্গে বিতর্ক, ঘরে নেতিবাচক শক্তি প্রবেশের কারণ হতে পারে।

ভূত চতুর্দশী,ভূত চতুর্দশী কেন পালন করা হয়, দীপাবলি, ভূত চতুর্দশী দিনে কোন কাজগুলি করা উচিত নয়, ভূত চতুর্দশীর দিনে আত্মারা পৃথিবীতে কখন আসে

অন্ধকারে না থাকা এবং প্রদীপ জ্বালানোর নিয়ম

এই দিনের অন্যতম রীতি হলো চোদ্দটি প্রদীপ জ্বালানো, যা “চোদ্দ প্রদীপ” নামে পরিচিত। বিশ্বাস করা হয়, এই আলো নরক থেকে আগত আত্মাদের পথ দেখায় এবং অন্ধকার শক্তি দূর করে। তাই সূর্যাস্তের পর ঘরে বা বারান্দায় অন্ধকার রাখবেন না। অনেকেই রান্নাঘর, উঠোন, গৃহদেবতার ঘর এবং টুলঘরে এক একটি প্রদীপ রাখেন। আলো মানেই ইতিবাচক শক্তি—তাই কোনো অবস্থায় অন্ধকারে থাকা উচিত নয়।

ভোজন ও নিষিদ্ধ খাবার সম্পর্কে সতর্কতা

ভূত চতুর্দশীর দিন মাংস, মাছ, ডিম, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি তামসিক খাদ্য একেবারে পরিহার করতে বলা হয়েছে। কারণ এই ধরনের খাবার শরীরে অলসতা ও নেতিবাচক ভাব সৃষ্টি করে, যা পিতৃপুরুষদের তুষ্ট করার দিনে শাস্ত্রবিরুদ্ধ। এর পরিবর্তে নিরামিষ ভোগ, ফল, দুধ এবং শুদ্ধ আহার গ্রহণ করা শুভ বলে গণ্য হয়। এছাড়া এই দিন রাতে ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো — কারণ বলা হয়, এই রাতে আত্মারা আশেপাশে ঘোরাফেরা করে, তাই মন ও দেহ উভয়ই হালকা রাখা শ্রেয়।

ভূত চতুর্দশী,ভূত চতুর্দশী কেন পালন করা হয়, দীপাবলি, ভূত চতুর্দশী দিনে কোন কাজগুলি করা উচিত নয়, ভূত চতুর্দশীর দিনে আত্মারা পৃথিবীতে কখন আসে

দেবতা বা পিতৃপুরুষদের অবহেলা করবেন না

এই দিনে পিতৃপুরুষদের আত্মা পৃথিবীতে আসে বলে বিশ্বাস রয়েছে। তাই তাঁদের উদ্দেশ্যে তিল, জলে দান, প্রদীপ জ্বালানো বা নাম জপ করা বিশেষ ফলপ্রদ। অনেকেই বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের স্নান করিয়ে বা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে আশীর্বাদ নেন। এটি পরিবারের শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।

কালো পোশাক পরা ও দেরি করে বাইরে থাকা এড়িয়ে চলুন

ভূত চতুর্দশীর রাত অন্ধকারের প্রতীক। তাই এই রাতে কালো বা গাঢ় রঙের পোশাক না পরাই শ্রেয়, কারণ এটি নেতিবাচক শক্তি আকর্ষণ করে বলে মনে করা হয়। তাছাড়া রাতে দেরি করে বাইরে থাকা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়, বিশেষত একা। ঘরে সময় কাটানো, মন্ত্রপাঠ বা পারিবারিক পূজায় অংশ নেওয়া এই দিনের সঠিক ব্যবহার।

উপসংহার

ভূত চতুর্দশী কেবল কুসংস্কারের দিন নয়—এটি প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক শক্তিকে দূরে রেখে জীবনের আলোকে আহ্বান করার প্রতীক। তাই এদিনের সব নিষেধাজ্ঞা, আচার ও নিয়মগুলো মেনে চললে মানসিক শান্তি, পারিবারিক ঐক্য ও আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। আলো জ্বালিয়ে, হৃদয় পরিষ্কার রেখে এবং পিতৃপুরুষদের স্মরণ করে আমরা সত্যিই অন্ধকার থেকে আলোয় যেতে পারি।

Leave a Comment